এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের যুবক হেলাল উদ্দিন শিপু হত্যা মামলার প্রধান আসামি বদরখালী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপি নেতা একেএম ইকবাল বদরীকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করেন আসামি ইকবাল বদরী। শুনানী শেষে আদালতের বিচারক আসামির জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাদি পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট হাবিব উদ্দিন মিন্টু আসামি ইকবাল বদরীকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর রাতে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়াপাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের ভাড়াটে দৃর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেন বিদেশ ফেরত যুবক শিপুকে। এ ঘটনায় তিনদিন পর ৬ নভেম্বর শিপুর মা ছকিনা বেগম বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা (নং জিআর ৪৮০/১৫) দায়ের করেন। মামলাটিতে আসামি করা হয় ৩০জনকে।
মামলার বাদী ছকিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে শিপু হত্যায় জড়িতদের আড়াল করতে দুই বছর পর দূর্বল চার্জশিট দেওয়া হয়। মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অভিযুক্ত আসামিরা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলো। শুরুতেই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিলেন চকরিয়া থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) কামরুল আজম। পরবর্তীতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য কক্সবাজার সিআইডি’র হাতে হস্তান্তর করা হয়। হত্যার পরপরই বেশ কয়েকজন এজাহারভূক্ত আসামী গ্রেফতার হলেও পুলিশের গাফেলতির কারণে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান।
তিনি বলেন, মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামীরা ইতোমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সিআইডি পুলিশের ওসি জাকির হোসেন মাহমুদ তাকে না জানিয়ে ২০১৬সালের ৩০ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
শিপুর মা ছকিনা খাতুন জানান, তদন্ত কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় তদন্তের জন্য বদরখালীতে আসলেও কোন সময় বাদির সাথে যোগাযোগ করেননি। আসামীরা কখন গ্রেফতার হয় আবার কোন সময় রিমান্ডে নেওয়া হয় জানানো হয় না। স্বাক্ষীদের কখন স্বাক্ষী নেওয়া হয়েছে তা জানানো হয়নি। মূলত তিনি যোগাযোগ করেছেন আসামীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সাথে।
মামলার বাদি ছকিনা বেগমের অভিযোগ, সর্বশেষ গতবছরের ৩০ডিসেম্বর বাদিকে না জানিয়ে প্রধান আসামী ইকবাল বদরী সহ ১৭জন আসামীকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেন চকরিয়া উপজেলা জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে। ওইসময় অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয় আসামি বদরখালী সমিতির সম্পাদক ইকবাল বদরী, নুরুল কাদের, ফজল কাদের, এম হোছাইন আহমদ, শাহাদত হোছাইন, আকতার হোছাইন, মো: ইউসুফ বদরী, মাহবুবুল আলম, বদিউল আলম, আবদুর রহমান, ওবাইদুল মোস্তফা ইমন, আক্কাছ আলী, মো: শাহাবউদ্দিন, হেদায়ত হোছাইন মিন্টু, তহিদুল ইসলাম, মোজাম্মেল হককে।
পরে সংক্ষুদ্ধ হয়ে গতবছর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের জন্য চট্টগ্রাম সিআইডির কাছে আবেদন করেন বাদী ছকিনা বেগম। পরে সিআইডি পুলিশও উল্লেখিত ১৭জন আসামিকে বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরই প্রেক্ষিতে আদালতে নারাজি দেন বাদি ছকিনা খাতুন।
মামলার বাদি ছকিনা খাতুন অভিযোগ করেছেন, চকরিয়া আদালতে মামলার ধার্য্য তারিখের আগে অভিযুক্ত আসামিরা নানাভাবে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে মামলার ডকেট বেশ ক’বার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিয়ে যায়। এভাবে বেশ কয়েকমাস ধরে আসামিরা অভিযোগপত্রের ব্যাপারে শুনানী নিয়ে বাঁধার সৃষ্টি করে। সর্বশেষ গত ২৮ আগষ্ট আদালত মামলার অভিযোগপত্রের বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্বান্ত দেন।
বাদি জানান, আদালত ওইদিন মামলার শুনানী শেষে সিআইডি পুলিশের বাদ দেয়া ১৭জন আসামির মধ্যে ১২জনকে অব্যাহতি দিয়ে অপর ৫ আসামি যথাক্রমে ইকবাল বদরী, নুরুল কাদের, ফজল কাদের, মাহাবুবুল আলম ও বদিউল আলমকে সংযুক্ত করে মামলাটি বিচার প্রক্রিয়ার জন্য আদেশ দেন।
জানা গেছে, আদালতে অভিযোগপত্রটি গৃহিত হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা ইকবাল বদরী আদালতে উপস্থিত হয়ে আইনজীবির মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। ওইসময় মামলার শুনানী শেষে আদালতের বিচারক আসামি ইকবাল বদরীকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একইভাবে আদালত গত ১২ সেপ্টেম্বর মামলার অপর আসামি ফজল কাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেন। #
পাঠকের মতামত: